Shamim Ashraf Shelley
—————————–
![]() |
A village in Dacope after cyclone Aila |
২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে। উপকূলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ৮ হাজার ৮শ’ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে যায়। খুলনা ও সাতক্ষীরার ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি নোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার পর ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে লায়লা, গিরি, হুদহুদ, নিলোফার, নার্গিস ইত্যাদি নামের ১৭টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। মহাসেন ও কোমেন ছাড়া এ অঞ্চলে কোন ঝড় আঘাত হানেনি। ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে ১২ জন, এবং ২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় কোমেন-এর আঘাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
![]() |
Pratapsarani Primary School, High School and Community Clinic was grabbed by the new current made by cyclone Aila |
পাউবোর আমাদীর উপ-বিভাগীয় শাখার সা্েবক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মতিন বাংলাপ্রেস.কম.বিডিকে বলেন, ঝুকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটি দেয়ার কাজ চলছে। তাছাড়া ভাঙন কবলিত বাঁধে ডাম্পিং ব্লক ফেলা হয়েছে। এছাড়া ভয়াবহ ভাঙনের কবলে থাকা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
![]() |
Nalian Ferry Ghat had been vanished several times after cyclone Aila |
দাকোপের গুনারী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মীর বাংলাপ্রেস.কম.বিডিকে জানান, আইলায় তার ঘর-বাড়ি ফসলি জমি সবকিছুই শিবসা নদীতে বিলিন হয়েছে। এখন পাশ্ববর্তী বাঁধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। দীর্ঘ ৭ বছর ফসলি জমিতে আমন ধান উৎপাদন করতে পারছি না। ফলে সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে।
সুতারখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বাংলাপ্রেস.কম.বিডিকে বলেন, ৭ বছরেও অনেক পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এলাকার অনেক পরিবার এখনো বেড়িবাঁধের উপর মানবেতর জীবনজাপন করছেন।
এখনও খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী, মহারাজপুর এবং দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের উপরে বাস করছেন। অন্যদিকে আইলার পরে জরুরি ভিত্তিতে যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিলো সেগুলোও মানসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়নি। ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম এসে পড়েছে। ফলে উপকূলবাসী নতুন আতঙ্কে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০০৯ সালের আইলার আঘাতে এখানে ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়, ৭ হাজার মানুষ আহত হন, সাড়ে ৬ হাজার গরু-বাছুর ও প্রায় ২ লাখ হাঁসমুরগি মারা যায়। উপকূলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ৮ হাজার ৮শ’ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে যায়। খুলনা ও সাতক্ষীরা এই দুই জেলাতেই ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি নোনাপানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এ দুটি জেলার প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে এবং প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ অস্থায়ীভাবে বাস্তচ্যুত হয়ে পড়েন।
ঘুর্ণিঝড় আইলার প্রভাবে সেদিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নদীতে জোয়ারের পানি বিদ্যুৎ বেগে বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে লোনা পানি প্রবেশ করে। মুহুর্তের মধ্যে মানুষের ঘরবাড়ি, চিংড়ি ঘের, ক্ষেত খামার, রাস্তাঘাট সবই পানিতে একাকার হয়ে যায়। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু, গবাদিপশু সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শত শত পরিবার ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আইলার জলোচ্ছাসে কয়রায় ৯ ব্যক্তি প্রাণ হারায়। ২৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়রায় হারেজখালি, পদ্মপুকুর, মঠবাড়ি, পাথরখালি, আশাশুনির চাকলা, রুইয়ারবিল, দাকোপের গোলবুনি, সুতারখালি, গুনারি, শ্যামনগরের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে দু’ বছর লোনা পানিতে তলিয়ে থাকে খুলনা-সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ন জনপদ।
মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত মঠবাড়ি ক্লোজার, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, পাথরখালি, গোলবুনি ক্লোজার তিন বছর পর ২০১২ সালে সেনাবাহিনীর ততা¡বধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত করতে সক্ষম হয়। আজো কয়রা এলাকার মানুষ আইলার ধকল পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি। পাউবোর বাঁধ প্রতিনিয়তই ভাঙছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারাচ্ছে মানুষ।
পাউবোর বেড়িবাঁধ মেরামত প্রসঙ্গে খুলনাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ বজলুর রশিদ বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচু হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে পাউবো বাঁধ মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাঁধের কিছুটা অংশে ড্যাম্পিং করে ব্লক বসানো হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে আগামী বছর থেকে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানো কার্যক্রম শুরু হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, সাত বছর আগের আইলার ক্ষতি ইতিমধ্যে মানুষ কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি বেশি বরাদ্দ দেওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। নদীভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে, আইলার সপ্তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দিনব্যাপী খুলনা প্রেস ক্লাব চত্বরে চলছে আইলার ভয়াল দৃশ্য সম্বলিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বেসরকারি সংগঠন গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) ও এর সদস্য সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি হারানো পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করার পূর্ব পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাটা ও ছিদ্র করার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলো শক্তিশালী করণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ বাধ্যতামূলক করারও দাবি জানান তিনি।
২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে। উপকূলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ৮ হাজার ৮শ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে যায়। খুলনা ও সাতক্ষীরার ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি নোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার পর ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে লায়লা, গিরি, হুদহুদ, নিলোফার, নার্গিস ইত্যাদি নামের ১৭টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। মহাসেন ও কোমেন ছাড়া এ অঞ্চলে কোন ঝড় আঘাত হানেনি। ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে ১২ জন এবং ২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় কোমেন-এর আঘাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ আইলার ৭ বছর পর গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুর্বল হয়ে মধ্য ও পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। এতে ঝরে যায় ২৪টি প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২ লাখ মানুষ। এবারও অন্তত ৮শ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১ লাখ একর ফসলি জমি। এ ঘূর্ণিঝড় খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাটে আঘাত না হানলেও কমপক্ষে ৬টি স্থানে বেড়িবাঁধে ফাঁটল ধরেছে। এছাড়া খুলনার ৪ নম্বর কয়রা, মহারাজপুর ও কালাবগীতে জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়।
এদিকে, আইলা’র সপ্তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক মানিক সাহা অভ্যর্থনা কক্ষে বেসরকারি সংগঠন গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) ও এর সদস্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে আইলা বিধ্বস্ত অধিবাসী এবং তাদের এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্গত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি আইন হয়েছে। কিন্তু আইনটি দীর্ঘ ৪ বছরেও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন, জীবিকা ও সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারের কাছে ৬টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবির মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও দাপ্তরিক আদেশ জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনটি কার্যকরকরণ, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ভূমি হারানো পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করার পূর্ব পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাটা ও ছিদ্র করার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত ও শক্তিশালীকরণ, উপকূলীয় কৃষি ও জীবনযাত্রা রক্ষায় অপরিকল্পিত নোনাপানির চিংড়ি ঘের বন্ধকরণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বেলার মাহফুজুর রহমান মুকুল, ক্লিন এর সভাপতি সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, এওসেড এর শামীম আরেফিন, পরিবর্তনের প্রধান নাজমুল আজম ডেভিড, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জিল্লুর রহমান ও মনিরুল হক বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), অ্যাওসেড, জেজেএস, রূপায়ন ও এসপিএস আইলার সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা নামক ঘূর্ণিঝড়ে খুলনার অন্তত ৪৫টি ইউনিয়ন এবং চালনা ও পাইকগাছা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইলায় ৫৭জনের প্রাণহানী, আর ৫ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ সম্পদ হারায়, ৬৮ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪৪ হাজার আংশিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫৯৭ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে ৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর নিহত হন ১৮জন। সিডরের আঘাতে ৪৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ গত ২১ মে রোয়ানু’র বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ায় ১২০টি বাড়ি আংশিক এবং ৪০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারটি উপজেলার এক হাজার একশ’ পরিবারের ৪ হাজার ৫৫৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ও তিলডাঙ্গা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপকূলবাসীদের নিয়ে কাজ করা ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, আইলার পর সাত বছর পার হয়ে গেলেও বেড়ি বাঁধ সংস্কার না করায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কোনো ভাবেই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যাবে না। ২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি করার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে বা ফুটো করে নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালাও দাপ্তরিক আদেশজারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা, উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত উপায়ে আরো শক্তিশালী করা, কৃষিজমিতে নোনাপানির চিংড়ি ঘের বন্ধ করা ও সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি (আইসিজেডএমপি) অনুসরণ বাধ্যতামলূক করাসহ ছয় দফা দাবিনামা উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক মনিরুলহক বাচ্চু, জিল্লুর রহমান, ক্লিন’র চেয়ারপারসন সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, অ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, পরিবর্তন খুলনা’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড, ক্লিন’র সুবর্ণা ইসলাম দিশা ও নাসিম রহমান কিরণ প্রমুখ।
আজ ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ৭ বছর পূর্তি। ২০০৯ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণ জনপদের উপকূলীয় অঞ্চল। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় খুলনার কয়রা ও দাকোপসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা।
দেখতে দেখতে আইলার ৭ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কয়রা ও দাকোপের সাড়ে ৩ হাজার পরিবার এখনও সরকারি তহবিলের সহায়তা না পেয়ে বাঁধের ওপর বসবাস করছে। অভিশপ্ত এই দিনটির কথা মনে হলে আজও ভয়ে শিউরে ওঠেন উপকূলবাসী। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে এ অঞ্চলের অসহায় মানুষ। আইলার কারণে কয়রা ও দাকোপ উপজেলার অনেক এলাকা এখনও প্রায় ফসলশূন্য। বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের অভাব অনটন বেড়েই চলেছে। শুধু ঘর-বাড়ি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসা সেবাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
পাউবোর আমাদীর উপ-বিভাগীয় শাখার সাবেক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটি দেওয়ার কাজ চলছে। তাছাড়া ভাঙন কবলিত বাঁধে ডাম্পিং ব্লক ফেলা হয়েছে। এছাড়া,ভাঙনের কবলে থাকা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বদিউজ্জামান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলবাসীর আশ্রয়ের জন্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলাবাসীর জন্য ২ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ জরুরি। আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এলাকার মানুষের পুনর্বাসনে সরকারিভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। কয়রাকে আইলার পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।
উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) -এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, ৭ বছর কেটে গেলেও এখনও কয়রার উত্তর বেদকাশি ও মহারাজপুর এবং দাকোপের কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন। আইলায় তাদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সব বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। নিজস্ব কোনও জমি না থাকায় তারা সরকারের গৃহনির্মাণ তহবিলের সহায়তা পাননি। এমনকি আজ পর্যন্ত তাদের কোনও খাস জমিও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আইলার পর জরুরিভিত্তিতে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো মানসম্মত না হওয়ায় জোয়ারের চাপ বা ভারী বর্ষণে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ২১ মে খুলনায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত না হানলেও সামান্য চাপেই ৬টি স্থানে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
কয়রার পরিবেশবিদ আ. আজিজ বলেন, পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আর দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে দক্ষিণ উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবন কোলঘেষা কয়রা।
উপেজলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। যে জন্য দুর্যোগে হাইরিক্স জোন হিসেবে কয়রা এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
কয়রা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুর রশিদ জানান, কয়রাবাসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো গোলখালী, জোড়শিং, আংটিহারা, ৪নং কয়রা, গোবরা, গাটাখালী, হরিণখোলা, কাটকাটা, নয়ানী, তেতুলতলার চর, পাথরখালী, হরিহরপুর, ঘড়িলাল ও হড্ডা।এসব এলাকার মানুষ দুর্যোগকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তিনি সরকারি প্রাথমিক ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী অধিদফতরের প্রকৌশলী নিরাপদ পাল জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদী ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, কয়রা, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালী ইউনিয়নে যে সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে তা যথেষ্ট। কিন্তু দক্ষিণ ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে আরও সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
দাকোপের গুনারী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মীর জানান, আইলায় তার ঘর-বাড়ি ফসলি জমি সব কিছুই শিবসা নদীতে বিলিন হয়েছে। এখন পার্শ্ববর্তী বাঁধের ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ৭ বছর ধরে ফসলি জমিতে আমন ধান উৎপাদন করতে পারছি না। ফলে সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে।
আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা
সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, আইলার জলোচ্ছ্বাসে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমি নলিয়ান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না পারা মানুষ নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জমিতে বালির চর পড়ে ভরাট হওয়ায় কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না।
সুতারখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, ৭ বছরেও অনেক পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এলাকার অনেক পরিবার এখনও বেড়িবাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.মোসাদ্দেক হোসেন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও নদী ভাঙনের কারণে জমির পরিমাণ কমছে। আইলার আগে ১৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হতো। আইলায় প্রায় ২শ’ হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৩৮টি পোল্ডারের সবই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৬৫১ কিলোমিটার বেঁড়িবাধের মধ্যে ৬৮৪ কিলোমিটার বিধ্বস্ত হয়। ৬৩৯টি স্লুইস গেটের মধ্যে ১০৯টি অকেজ হয়ে যায়। তবে আইলার পর ৩৩টি পোল্ডারের ২৫০ কিলোমিটার এলাকা মেরামত করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর মানুষ এখনও সেই ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে কষ্টের মধ্যে বেড়িবাঁধ আকড়ে আছেন তারা। আইলার পর ভেঙে যাওয়া পবনা বাঁধ, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, শিকারিবাড়ি, পাথরখালি মেরামত হয়েছে। কিন্তু কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় মাটি দেওয়ার উদ্যোগ না নেওয়ায় বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকার বেড়িবাঁধগুলো অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ সকল বাঁধ সংস্কার করা হয়নি। ফলে এসব বাঁধ ভেঙে আবারো গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইলার জলোচ্ছ্বাসে খাবার পানির উৎস নষ্ট হয়ে যায়। গত ৭ বছরেও বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠী দারুণ কষ্টে রয়েছেন। তারা ১০/১২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। পরিকল্পনা মাফিক গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুকুর সংস্কার করে পিএসএফ স্থাপন করা যায়নি এখনও। আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আজও সংস্কার হয়নি। প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষকে দুর্যোগকালীন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নেই। উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো এখনও পুরোপুরি সংস্কার সম্ভব হয়নি।
আইলা’র ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায়নি ৭ বছরেও
অন্যদিকে দাকোপে ক্ষতিগ্রস্তদের এখনও পুনর্বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কিছু কিছু এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। বেশির ভাগ রাস্তার বেহাল দশা। জোয়ারের চাপে পাউবোর ৩১, ৩২ ও ৩৩ নং পোল্ডারের ৩৪টি স্থানে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো হচ্ছে-সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান বাজার, গুনারী, সুতারখালী ফরেস্ট অফিসের পশ্চিম কোনা, কালাবগী পন্ডিত চন্দ্র স্কুল, কালিবাড়ি লঞ্চঘাট,কামারখোলা ইউনিয়নের কালিনগর টাওয়ার এলাকা, কামারখোলা, জালিয়াখালী, ভিটেভাঙ্গা, জয়নগর, তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনিবাসিয়া পুলিশ ফাঁড়ি, মোজামনগর, আন্ধারমানিক, গড়খালী, বটবুনিয়া, বানিশান্তা ইউনিয়নের আমতলা পুলিশ ফাঁড়ি, বানিশান্তা বাজার, পতিতা পল্লী, পূর্ব ঢাংমারী বড় বাড়ি, ভোজন খালী, খেজুরিয়া, বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি খেয়াঘাট, কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর হাটখোলা, বুড়ির ডাবুর, পানখালী ইউনিয়নের ফেরীঘাট, খোনা, মৌখালী, পানখালী, দাকোপ ইউনিয়নের দাকোপ লঞ্চঘাট, পোদ্দারগঞ্জ বাজার, দাকোপ খেয়াঘাট (কালিনগর আড়পার) চালনা পৌরসভার নলোপাড়া থেকে চালনা বাজার পুরান জামে মসজিদ পর্যন্ত, চালনা বাজার লঞ্চঘাট থেকে পাকা ঘাট পর্যন্ত।
![]() |
Hasan Mehedi read out the written speech in the press conference |
মঙ্গলবার খুলনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনগুলোর নেতারা। উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), এ্যাওসেড, জেজেএস, রূপায়ন ও এসপিএস এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পার হয়ে গেলেও দাকোপ ও কয়রার সাড়ে ৩ হাজার দুর্গত জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ আজও কাটেনি। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ঘরবাড়ি-জমিজমা বিলীন হয়ে যাবার পর বাধ্য হয়ে এসব পরিবার বাস করছে বেড়িবাঁধের উপর। আবার সেই বেড়িবাঁধ কেটে ও ফুটো করে আবারও নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে নোনাপানির চিংড়ি চাষের জন্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছে না। আটকে আছে কয়েকটি বিধিমালা তৈরিতে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।
লিখিত বক্তব্যে হাসান মেহেদী বলেন, আইলার পর সাত বছর পার হয়ে গেলেও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কোনোভাবেই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যাবে না। ২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি করার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে বা ফুটো করে নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও দাপ্তরিক আদেশ জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা, উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত উপায়ে আরো শক্তিশালী করা, কৃষিজমিতে নোনাপানির চিংড়িঘের বন্ধ করা ও সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি (আইসিজেডএমপি) অনুসরণ বাধ্যতামলূক করাসহ ছয় দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক মনিরুল হক বাচ্চু, জিল্লুর রহমান, ক্লিন-এর চেয়ারপারসন সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, এ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, পরিবর্তন-খুলনা’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড, ক্লিন-এর সুবর্ণা ইসলাম দিশা, নাসিম রহমান কিরণ প্রমূখ।
Link: আইলা দুর্গতদের বাঁচাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকরের দাবি
![]() |
A makeshift on embankment in Dacope, Khulna |