Shamim Ashraf Shelley
—————————–
এখনও খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী, মহারাজপুর এবং দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ বেড়িবাঁধের উপরে বাস করছেন। অন্যদিকে আইলার পরে জরুরি ভিত্তিতে যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিলো সেগুলোও মানসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়নি। ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম এসে পড়েছে। ফলে উপকূলবাসী নতুন আতঙ্কে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০০৯ সালের আইলার আঘাতে এখানে ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়, ৭ হাজার মানুষ আহত হন, সাড়ে ৬ হাজার গরু-বাছুর ও প্রায় ২ লাখ হাঁসমুরগি মারা যায়। উপকূলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ৮ হাজার ৮শ’ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে যায়। খুলনা ও সাতক্ষীরা এই দুই জেলাতেই ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি নোনাপানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এ দুটি জেলার প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে এবং প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ অস্থায়ীভাবে বাস্তচ্যুত হয়ে পড়েন।
ঘুর্ণিঝড় আইলার প্রভাবে সেদিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নদীতে জোয়ারের পানি বিদ্যুৎ বেগে বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে লোনা পানি প্রবেশ করে। মুহুর্তের মধ্যে মানুষের ঘরবাড়ি, চিংড়ি ঘের, ক্ষেত খামার, রাস্তাঘাট সবই পানিতে একাকার হয়ে যায়। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু, গবাদিপশু সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। শত শত পরিবার ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আইলার জলোচ্ছাসে কয়রায় ৯ ব্যক্তি প্রাণ হারায়। ২৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়রায় হারেজখালি, পদ্মপুকুর, মঠবাড়ি, পাথরখালি, আশাশুনির চাকলা, রুইয়ারবিল, দাকোপের গোলবুনি, সুতারখালি, গুনারি, শ্যামনগরের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে দু’ বছর লোনা পানিতে তলিয়ে থাকে খুলনা-সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ন জনপদ।
মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত মঠবাড়ি ক্লোজার, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, পাথরখালি, গোলবুনি ক্লোজার তিন বছর পর ২০১২ সালে সেনাবাহিনীর ততা¡বধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত করতে সক্ষম হয়। আজো কয়রা এলাকার মানুষ আইলার ধকল পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি। পাউবোর বাঁধ প্রতিনিয়তই ভাঙছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারাচ্ছে মানুষ।
পাউবোর বেড়িবাঁধ মেরামত প্রসঙ্গে খুলনাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ বজলুর রশিদ বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচু হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে পাউবো বাঁধ মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাঁধের কিছুটা অংশে ড্যাম্পিং করে ব্লক বসানো হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে আগামী বছর থেকে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানো কার্যক্রম শুরু হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, সাত বছর আগের আইলার ক্ষতি ইতিমধ্যে মানুষ কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি বেশি বরাদ্দ দেওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। নদীভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে, আইলার সপ্তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দিনব্যাপী খুলনা প্রেস ক্লাব চত্বরে চলছে আইলার ভয়াল দৃশ্য সম্বলিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বেসরকারি সংগঠন গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) ও এর সদস্য সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি হারানো পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করার পূর্ব পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাটা ও ছিদ্র করার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলো শক্তিশালী করণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ বাধ্যতামূলক করারও দাবি জানান তিনি।
২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে। উপকূলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ৮ হাজার ৮শ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে যায়। খুলনা ও সাতক্ষীরার ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দেড় লাখ একর জমি নোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার পর ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে লায়লা, গিরি, হুদহুদ, নিলোফার, নার্গিস ইত্যাদি নামের ১৭টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। মহাসেন ও কোমেন ছাড়া এ অঞ্চলে কোন ঝড় আঘাত হানেনি। ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে ১২ জন এবং ২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় কোমেন-এর আঘাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ আইলার ৭ বছর পর গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুর্বল হয়ে মধ্য ও পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। এতে ঝরে যায় ২৪টি প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২ লাখ মানুষ। এবারও অন্তত ৮শ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১ লাখ একর ফসলি জমি। এ ঘূর্ণিঝড় খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাটে আঘাত না হানলেও কমপক্ষে ৬টি স্থানে বেড়িবাঁধে ফাঁটল ধরেছে। এছাড়া খুলনার ৪ নম্বর কয়রা, মহারাজপুর ও কালাবগীতে জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়।
এদিকে, আইলা’র সপ্তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক মানিক সাহা অভ্যর্থনা কক্ষে বেসরকারি সংগঠন গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) ও এর সদস্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে আইলা বিধ্বস্ত অধিবাসী এবং তাদের এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্গত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি আইন হয়েছে। কিন্তু আইনটি দীর্ঘ ৪ বছরেও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন, জীবিকা ও সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারের কাছে ৬টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবির মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও দাপ্তরিক আদেশ জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনটি কার্যকরকরণ, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ভূমি হারানো পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করার পূর্ব পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাটা ও ছিদ্র করার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত ও শক্তিশালীকরণ, উপকূলীয় কৃষি ও জীবনযাত্রা রক্ষায় অপরিকল্পিত নোনাপানির চিংড়ি ঘের বন্ধকরণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বেলার মাহফুজুর রহমান মুকুল, ক্লিন এর সভাপতি সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, এওসেড এর শামীম আরেফিন, পরিবর্তনের প্রধান নাজমুল আজম ডেভিড, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জিল্লুর রহমান ও মনিরুল হক বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), অ্যাওসেড, জেজেএস, রূপায়ন ও এসপিএস আইলার সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা নামক ঘূর্ণিঝড়ে খুলনার অন্তত ৪৫টি ইউনিয়ন এবং চালনা ও পাইকগাছা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইলায় ৫৭জনের প্রাণহানী, আর ৫ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ সম্পদ হারায়, ৬৮ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪৪ হাজার আংশিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫৯৭ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে ৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর নিহত হন ১৮জন। সিডরের আঘাতে ৪৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ গত ২১ মে রোয়ানু’র বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ায় ১২০টি বাড়ি আংশিক এবং ৪০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারটি উপজেলার এক হাজার একশ’ পরিবারের ৪ হাজার ৫৫৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ও তিলডাঙ্গা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপকূলবাসীদের নিয়ে কাজ করা ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, আইলার পর সাত বছর পার হয়ে গেলেও বেড়ি বাঁধ সংস্কার না করায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কোনো ভাবেই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যাবে না। ২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি করার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে বা ফুটো করে নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালাও দাপ্তরিক আদেশজারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা, উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত উপায়ে আরো শক্তিশালী করা, কৃষিজমিতে নোনাপানির চিংড়ি ঘের বন্ধ করা ও সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি (আইসিজেডএমপি) অনুসরণ বাধ্যতামলূক করাসহ ছয় দফা দাবিনামা উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক মনিরুলহক বাচ্চু, জিল্লুর রহমান, ক্লিন’র চেয়ারপারসন সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, অ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, পরিবর্তন খুলনা’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড, ক্লিন’র সুবর্ণা ইসলাম দিশা ও নাসিম রহমান কিরণ প্রমুখ।
![]() |
Hasan Mehedi read out the written speech in the press conference |
মঙ্গলবার খুলনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনগুলোর নেতারা। উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), এ্যাওসেড, জেজেএস, রূপায়ন ও এসপিএস এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পার হয়ে গেলেও দাকোপ ও কয়রার সাড়ে ৩ হাজার দুর্গত জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ আজও কাটেনি। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ঘরবাড়ি-জমিজমা বিলীন হয়ে যাবার পর বাধ্য হয়ে এসব পরিবার বাস করছে বেড়িবাঁধের উপর। আবার সেই বেড়িবাঁধ কেটে ও ফুটো করে আবারও নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে নোনাপানির চিংড়ি চাষের জন্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছে না। আটকে আছে কয়েকটি বিধিমালা তৈরিতে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।
লিখিত বক্তব্যে হাসান মেহেদী বলেন, আইলার পর সাত বছর পার হয়ে গেলেও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কোনোভাবেই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যাবে না। ২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি করার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে বা ফুটো করে নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও দাপ্তরিক আদেশ জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা, উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত উপায়ে আরো শক্তিশালী করা, কৃষিজমিতে নোনাপানির চিংড়িঘের বন্ধ করা ও সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি (আইসিজেডএমপি) অনুসরণ বাধ্যতামলূক করাসহ ছয় দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক মনিরুল হক বাচ্চু, জিল্লুর রহমান, ক্লিন-এর চেয়ারপারসন সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, এ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, পরিবর্তন-খুলনা’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড, ক্লিন-এর সুবর্ণা ইসলাম দিশা, নাসিম রহমান কিরণ প্রমূখ।
Link: আইলা দুর্গতদের বাঁচাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকরের দাবি
![]() |
Professor Dilip Kumar Datta, Environmental Science discipline, Khulna University is addressing the participants of CLEAN’s program on Sidr Day 2014 |